সেচ পদ্ধতি (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - কৃষিশিক্ষা কৃষি প্রযুক্তি | - | NCTB BOOK
996
996

বিভিন্নভাবে জমিতে পানি সেচ দেওয়া যায়। কীভাবে পানি সেচ দেওয়া হবে তা নির্ভর করে জমির মাটির প্রকার, ভূমির প্রকৃতি, পানির উৎস, ফসলের ধরন ইত্যাদির উপর। নিচে কয়েকটি সেচ পদ্ধতির নাম
উল্লেখ করা হলো-
১। প্লাবন সেচ
২। নালা সেচ
৩। বর্ডার সেচ
৪। বৃত্তাকার সেচ
৫। ফোয়ারা সেচ

প্লাবন সেচ: এই পদ্ধতিতে সমতল জমিতে খাল, বিল বা পুকুর হতে আসা পানি দিয়ে প্রধান নালার সাহায্যে সেচ দেওয়া হয়। সেচের পানি যাতে আশেপাশের জমিতে যেতে না পারে সেজন্য জমির চারদিকে আইল বাঁধতে হয়। এভাবে সেচ দিলে-
১। অল্প সময়ে অধিক জমিতে সেচ দেওয়া যায়।
২। জমির মধ্যে নালার দরকার হয় না।
৩। সমতল জমির জন্যে প্লাবন সেচ কার্যকর।
৪। শ্রম ও সময় উভয়ই কম লাগে।
৫। রোপা ফসল বা শস্য ছিটিয়ে বোনা জমিতে প্লাবন সেচ কার্যকর হয়।
৬ । জমি যদি ঢালু হয় তবে আইল বেঁধে পানি আটকাতে হয়।

নালা সেচ : নালা সেচ পদ্ধতিতে জমির ঢাল অনুযায়ী ভূমির বন্ধুরতা বা উঁচু নিচু সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নালা তৈরি করা হয়। অতঃপর প্রধান নালার সাথে জমির এ নালাগুলোর সংযোগ করে সেচ দেওয়া হয়। নালার গভীরতা ও দৈর্ঘ্য জমির উঁচু নিচুর উপর নির্ভর করে। জমি সমতল হলে নালার দৈর্ঘ্য বেশি হবে আর জমির ঢাল বেশি হলে দৈর্ঘ্য কম হবে।

এভাবে সেচ দিলে-

১। সেচের পানি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় ও জলাবদ্ধতার ভয় থাকে না।
২। সমস্ত জমি সমানভাবে ভিজানো যায়।
৩। পানির অপচয় কম হয়।
৪। মাটির ক্ষয় কম হয়।
৫। একই পরিমাণ পানি দ্বারা প্লাবন অপেক্ষা অধিক জমিতে সেচ দেওয়া যায়।

বর্ডার সেচ : বর্ডার সেচ পদ্ধতিতে জমির ঢাল ও বন্ধুরতা অনুযায়ী ফসলের জমিকে কতগুলো খণ্ডে বিভক্ত করা হয়। প্রধান নালা থেকে জমির খণ্ডগুলোতে পানি সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি খন্ডে প্রধান নালা থেকে পানি প্রবেশের পথ আছে। একটি খণ্ডে পানি সেচ দেওয়া হলে এর প্রবেশপথ বন্ধ করে পরবর্তী খণ্ডে পানি সরবরাহ করা হয়। এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা আছে। অর্থাৎ জমি থেকে ঢালের দিকে নালা কেটে পানি নিকাশ করা হয়।

এই পদ্ধতিতে সেচ দিলে-
১। পানি ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।
২। পানির অপচয় হয় না।
৩। মাটির ক্ষয় কম হয়

বৃত্তাকার সেচ : এই সেচ পদ্ধতিতে সমস্ত জমিতে সেচ না দিয়ে শুধু যে স্থানে গাছ রয়েছে সেখানেই পানি সরবরাহ করা হয়। সাধারণত বহুবর্ষজীবী ফলগাছের গোড়ায় এই পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হয়। ফল বাগানের মাঝ বরাবর একটি প্রধান নালা কাটা হয়। অতঃপর প্রতি গাছের গোড়ায় বৃত্তাকার নালা কাটা হয় এবং প্রধান নালার সাথে সংযোগ দেওয়া হয়।

এই পদ্ধতিতে সেচ দিলে-
১। পানির অপচয় হয় না।
২। পানি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।

ফোয়ারা সেচ : ফসলের জমিতে বৃষ্টির মতো পানি সেচ দেওয়াকে ফোয়ারা সেচ বলে। শাক-সবজির ক্ষেতে এই পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হয়। আমাদের দেশে বীজতলায় কিংবা চারা গাছে ঝাঁঝরি দিয়ে যে সেচ দেওয়া হয় তাও ফোয়ারা সেচ।

কাজ: ফসল বা সবজির মাঠ পরিদর্শনে যাও এবং দেখ কীভাবে কৃষকেরা সেচ দিচ্ছেন। ব্যবহৃত সেচ পদ্ধতির উপর প্রতিবেদন তৈরি করে শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।

নতুন শব্দ: সেচ, প্লাবন সেচ, নালা সেচ, বর্ডার সেচ, বৃত্তাকার সেচ

Content added || updated By
Promotion